নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন বদলের সনদ হিসেবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথমদিকে কেউ কেউ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টিকে ঠিকমতো বিশ্বাস করেনি, বরং কারো কারো মনে এটি নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বিষয়টিকে আস্থার সঙ্গে নিয়ে এ ঘোষণার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং তৃণমূল থেকে উঠে আসা একটি বিষয়। এরফলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ যে একটি মিথ নয়, তা-ই এরমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পণ করেছি।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সরকারি সেবা নিয়ে যেতে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর দেশের ৪,৫৪৭ ইউনিয়নে চালু হয় ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র’, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার নামে পরিচিত। নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারী উদ্যোক্তা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। এসব সেবাকেন্দ্রে কম্পিউটার কম্পোজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, ভর্তি ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধন, বিমা, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষিকাজের জন্য মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, ডাক্তারি পরামর্শসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি নির্বাচিত কিছু ডিজিটাল সেন্টার থেকে পাসপোর্ট ও ভিসার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। বিদেশে গমনেচ্ছুক ব্যাক্তি অনলাইনে ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে বড় একটি সংখ্যায় নারীও রয়েছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, ডিজিটাল সেন্টার তৃণমূল সেবার হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে। আইসিটি ডিভিশন এবং এটুআইয়ের মতে, প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ মানুষ এসব কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টার থেকে উদ্যোক্তারা আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা।
আমাদের আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকারি ওয়েবসাইট ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’। এতে যুক্ত হয়েছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অফিসের নানা কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর দেশের সকল জেলায় জেলা ই-সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। দালালদের উৎপাত ছাড়াই ই-সেবাকেন্দ্র থেকে তিন দিনের মধ্যে জমির পর্চাসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
অনলাইনে দরপত্র জমা দিতে ঠিকাদারদের জন্য চালু করা হয়েছে ই-প্রকিউরমেন্ট। এখন অনেক মন্ত্রণালয় অনলাইনে দরপত্র আহবান করছে। এতে টেন্ডার বাণিজ্য রোধে এ ধরনের উদ্যোগ ভূমিকা রাখছে। আদালতের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করতে চালু হয়েছে মোবাইল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের যাবতীয় ডকুমেন্ট অনলাইনে সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য রাখা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে সকল রেকর্ড এসএ, সিএস, বিআরএস ও খতিয়ান কপি ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে।
সরকারি অফিসে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে এবং কর্মযজ্ঞ সম্পাদন প্রক্রিয়া গতিময় করতে জনবান্ধব ডি-নথিসিস্টেম চালু হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো পেপারলেস অফিস যা নিশ্চিত করতে পারে এই ডি-নথি সিস্টেম।
উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য এবং উদ্ভাবনী ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য এটুআইয়ের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ নাগরিক সেবা গ্রহণে মাত্রাতিরিক্ত ধাপ কমিয়ে বা প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সময়, অর্থ ও যাতায়াতের পরিমাণ হ্রাস করা যায় এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহ বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় একটি সহজ উপায়ে অনলাইনে জমা দিতে পারেন। একটি নিরপেক্ষ বাছাই পদ্ধতির মাধ্যমে বাছাইকৃত আইডিয়াসমূহে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় গতিশীলতা বৃদ্ধিসহ ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণ করেছে এবং আরো স্যাটেলাইট প্রেরণের উদ্যোগসহ নতুন নতুন প্রযুক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ব্লক চেইন, আইওটি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ পারদর্শিতার স্বাক্ষর দেখিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে সরকারের সকল উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, ঝালকাঠি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS