পেয়ারা আর শীতলপাটি এই নিয়ে ঝালকাঠি
১. ভূমিকা :
বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে একটি সুখি ও সমৃদ্ধ দেশে রূপামত্মরের জন্য রূপকল্প ২০৪১ প্রণয়ন করেছে।উক্ত রূপকল্পসমূহ বাসত্মবায়নের জন্য প্রয়োজন দ্রম্নত এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাই বিভিন্নভাবে স্বাতন্ত্র্য মন্ডিত ও অর্থনৈতিভাবে সম্ভাবনাময়। অন্যান্য জেলার মত ঝালকাঠি জেলারও রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। ঝালাকঠি জেলার কৃষিপণ্য, কুঠির শিল্প, ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য নদী-খাল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কার্যকর ব্রান্ডিং এ রূপ দিয়ে জেলাকে দেশে বিদেশে পরিচিত করা সম্ভব। জেলার পেয়ারা, শীতলপাটি এর উৎপাদন যেমনভাবে বৃদ্ধি পাবে তেমনি জেলার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে জেলার পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২. ঝালাকাঠি জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
ঝালকাঠি ভূখন্ডে ঠিক কবে থেকে জনবসতি শুরম্ন হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও নাম দেখে বোঝা যায়-এখানে অতি প্রাচীনকাল হতে কৈবর্ত জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরাই প্রথম আবাদ আরম্ভ করেছিল। কৈবর্ত জেলেদের ঝালো বলা হতো এবং তাদের পাড়াকে বলা হতো ঝালোপাড়া। অনেকের ধারণা এ ঝালোপাড়া থেকেই ঝালাকাঠি নামের উৎপত্তি। কবি বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যেও জেলে সম্প্রদায়কে ঝালো নামে উলেস্নখ করেছেন। মেহেদীপুরের জেলেদের সঙ্গে স্থানীয় লোকদের মনোমালিন্য দেখা দিলে তারা বাসন্ডা ও ধানহাটা খালের উভয় তীরে কাটাবাখারী জঙ্গল কেটে আবাদ করে বসতি স্থাপন করে। ঝালাকঠি বন্দরে পূর্বে অধিকাংশ নাগরিকই ছিল কৈবর্তদাস বা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। বর্তমান ঝালকাঠির পশ্চিম তীরে জেলেরা জঙ্গল সাফ করে বাসস্থান তৈরী করতঃ জেলে+কাঠি=জাল+কাঠি অপভ্রংশে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয়েছে। এই জেলে ও জঙ্গলের কাঠি থেকেই উৎপত্তি হয় ঝালকাঠির নাম। তেমনি চাঁদকাঠি, কৃষ্ণকাঠি, চরকাঠি, বিনয়কাঠি ইত্যাদি। যা বিস্ত্তত রয়েছে স্বরম্নপকাঠী পর্যমত্ম। বিশ্বরম্নপপ সেনের একখানি তাম্রলিপিতে ঝালকাঠি ও নৈকাঠির নামও লেখা আছে। এ থেকেও ঝালকাঠি নামটি যে জেলেদের কাছ থেকে পাওয়া তার সমর্থন মিলে। ঝালকাঠি জেলার প্রাচীন নাম ছিল মহারাজগঞ্জ। সবুজ মাঠ গাছ-গাছালী, নদী-নালা, খাল-বিল, অপার সৌন্দর্য্যমন্ডিত ৭৫৮.০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ছোট্র একটি জেলা ঝালকাঠি। ১৯৮৪ সালথেকে বাংলাদেশের মানচিত্রে এ জেলাটি উজ্জ্বল নÿত্রের মত বিরাজ করছে। এ জেলার নাম উচ্চারণ করার সময়ই সারা দেশের মানুষের হৃদয় আকাশে চাঁদের মত ভেসে ওঠে কবি জীবনান্দ দাশ এর বিখ্যাত আবার আসিব ফিরে কবিতার ধানসিঁড়ি নদীটি। এ জেলার আছে এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস যা প্রদীপ্ত ভাস্করের মত জ্যোতি ছড়াচ্ছে অনর্গল। এ জেলাটি বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে একটি হলেও সর্বক্ষেত্রে রাখছে স্বতন্ত্র ভূমিকা।
৩ সীমানা :
উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা। আয়তন ৭৫৮.০৬ বর্গ কিলোমিটার।
৪ এক নজরে ঝালকাঠি জেলা :
ৰ
অবস্থান: ২২০-২৫’’ হতে ২২০-৪৯’’ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০০-১৮’’ দ্রাঘিমাংশ উত্তরাংশ ‘‘সীমানা: উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা। আয়তন: ৭৫৮.০৬ বর্গকিলোমিটার। প্রশাসনিক কাঠামো: উপজেলা: ০৪টি (ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া), থানা: ০৪টি, পৌরসভা: ০২টি ( ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি), ইউনিয়ন: ৩২টি, গ্রাম: ৪৭১টি,মৌজা: ৪১২টি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস: ৩১টি, হাজ-বাজার: ৮৯টি, জনসংখ্যা: (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী): মোট জনসংখ্যা : ৬,৯৪,০৯০জন, পুরম্নষ: ৩,৪৬,১৬১, মহিলা: ৩,৪৭,৯২৯ জন। শিক্ষা সংক্রামত্ম তথ্য: কলেজ: ১৮টি, কারিগরি কলেজ: ০৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ১৫৭টি, নিমণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৩৬টি, মাদ্রাসা: ১২৩টি, কামিল: ০১টি, ফাযিল: ১৫টি, আলিম: ১৩টি, দাখিল: ৯৪টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়: সরকারি প্রাথমিক : ৩৬৪টি, রেজিস্টার্ড: ১৬২টি, শিশু কল্যাণ প্রা: বিদ্যালয় ঝালকাঠি-২২: ০১টি, শিক্ষাার হার: ৬৫.৭৪% (২০০১ সালের শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী)। স্বাস্থ্য সংক্রামত্ম তথ্য: হাসপাতাল (ক) ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল: ০১টি (খ) ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল: ০২টি (গ) ৩১ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল: ০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপেস্নক্স: ০৩টি, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র: ০৫টি, ডায়াবেটিক সেন্টার: ০১টি, ক্লিনিক: প্রসত্মাবিত কমিউনিটি ক্লিনিক: ২৪টি, কমিউনিটি ক্লিনিক: ৬৪টি, যাতায়াত ব্যবস্থা: পাকা: ৩৯১.৪৩ কিলোমিটার, আধাপাকা: ৭৫৭. ০৭ কিলোমিটার, কাঁচা: ১২৮০.৯৯ কিলোমিটার, ঝালকাঠি পৌরসভা সড়ক: পাকা: ৫৬.০০ কিলোমিটার, কাঁচা: ৫০.০০ কিলোমিটার, ফেরিঘাট: ০২টি, প্রধান নদী: সুগন্ধা, বিষখালী ও ধানসিঁড়ি।
৫ জেলার ঐতিহ্য :
৫.১ ঝালকাঠির পেয়ারা :
ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ও নবগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে পেয়ারা চাষ হয়ে আসছে বহুবৎসর ধরে। পেয়ারা হচ্ছে এই এলাকার মানুষের বেচে থাকার প্রথম অবলম্বন। কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে ভীমরম্নলী মীরাকাঠি, ডুমুরিয়া, ভৈরমপুর,খেজুরা,খোদ্দবরাহর,বেশাইনখান, শংকরধবল, বেউখান, স্থানসিংহপুর ও কীর্তিপাশা এবং নবগ্রাম ইউনিয়নের নবগ্রাম, হিমানন্দকাঠি, দাড়িয়াপুর, সওরাকাঠি ও কঙ্গারামচন্দ্রপুরে প্রচুর পরিমানে সরজন পদ্ধতিতে স্বরম্নপকাঠি জাতের পেয়ারা চাষ হয়ে আসছে। এই জাতটি আনুমানিক দুই শত বৎসর পূর্বে তীর্থ স্থান ভারতের গয়া থেকে সংগ্রহ করে। তারা হোগলা বন কেটে জমি কান্দি বা সরজন তৈরী করে উচু করে নেয় যাতে বর্ষা বা জোয়ারের পানিতে কান্দি বাবেড নিমজ্জিত না হয় এবং পানি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না করে নিস্কাসনের সুযোগ তৈরী হয়। এই কান্দিতে তারা গ্রামের পর গ্রাম পেয়ারার বাগান তেরী করে। দুটি কান্দির মাঝে একটি নালা তৈরী হয়।জোয়ারের পানি বা অতিবর্ষার পানি এই নালা দিয়ে খালে উঠা নামা করে। বর্ষা মৌসুমে যখন পেয়ারা পাকা শুরম্ন করে তথন চাষীরা নৌকায় বাগানে ঢোকে এবং পেয়ারা পেড়ে নৌকা ভরে অসংখ্য খাল পথে বাজারে নিয়ে আসে এবং খালের মধ্যে নৌকায় বাজার বসে এবং কেনা বেচা হয়। এখানে প্রধান প্রধান বাজার হলো ভীমরম্নলী, শতদশকাঠি বাজার, আতা বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, কুড়িয়ানা বাজার, আটঘর বাজার প্রভৃতি।
৫.২ পেয়ারার প্রকারভেদ :
স্বরম্নপকাঠী জাতের পেয়ারা বিভিন্ন প্রকার-১। পূর্ন মন্ডলীঃ পেয়ারা গোলাকার, মাঝারী সাইজের, পেয়ারার উপরে আড়াআড়ি দাগ আছে, খেতে সুস্বাদু, সু-ঘ্রানযুক্ত ২। মুকুন্দপুরীঃ লম্বাটে, মাঝারী সাইজের, আগাম পাকে,খেতে সুস্বাদু, বাজারে চাহিদা কম ৩। চায়না পেয়ারাঃ তুলনা মূলক আকারে ছোট, রং লালচে, খেতে ভালো, পাকলে রং লাল হয় ৪। লাল পেয়ারাঃগোলাকৃতি, আকারে মাঝারী, সুঘ্রাণ যুক্ত, পাকলে ভিতর লালচে বর্ণ হয়, চাহিদা কম ৫। স্বরম্নপকাঠীঃ আকারে গোলাকৃতি, মাঝারী সাইজের, পেয়ারা উপরিতল মসৃণ, খেতে কচকচে, ফলন বেশি, বাজারে চাহিদা সব থেকে বেশি।
৫.৩ ঝালকাঠির শীতলপাটি :
ঝালকাঠির বহুকালের পুরোনো ঐতিহ্য শীতলপাটি। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি এলে সতে দেয়া হতো পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল বিশেষ ধরনের পাটি। বর্তমানেও হিন্দুদের বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ শীতলপাটি। গরমকালে শীতলপাটির কদর একটু বেশি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দুপুরে শীতলপাটি দেহ ও মনে শীতলতা আনে। দেশের যে কয়টি জেলায় শীতলটাটি তৈরি হয় তার মধ্যে ঝালকাঠি জেলা অন্যতম। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি, ডহশংকর, সাংগর, জগন্নাথপুর গ্রামের প্রায় ২০০ টি পরিবার শীতলপাটির তৈরি ও পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল পাইত্র্যা নামক এক প্রকার গুল্ম জাতীয় গাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া রাজাপুর সদর, নলছিটির তিমিরকাঠ, কামদেবপুর প্রভৃতি জায়গায় শীতলপাটি তৈরি হয়। এছাড়া ঝালকাঠির কাঁসারিপট্রির কয়েকটা বাড়িতে শীতলপাটি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে ঝালকাঠির প্রায় ৩০০ (তিনশত) টি এর বেশি পরিবার শীতলপাটির সাথে প্রত্যÿভাবে জড়িত এবং এর মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। ঝালকাঠির সবচেয়ে বেশি শীতলপাটি তৈরি হয় হাইলাকাঠি গ্রামে। এ গ্রামের পাটিবররা সবচেয়ে ব্যসত্ম সময় কাটায় গ্রীষ্মকালে। গমরকালের ৩ মাসের আয় দিয়েই তারা প্রায় পুরো বছর চালায়। এই গ্রামে প্রায় ১০০ (একশত) বিঘা/ ৩৫ (পয়ত্রিশ) একর জমিতে শীতলপাটির কাঁচামাল পাইত্র্যা চাষ হয়। এখানে প্রায় ২০০ (দুইশত) জন কৃষক এ পাইত্র্যা চাষাবাদ ও রÿণাবেÿণ করেন। এছাড়া শুক্তাগড় ইউনিয়নের সাংগর ও জগন্নাথপুর গ্রামে আনুমানিক ২০ (বিশ) একর জমিতে পাইত্র্যা জন্মে। এসব গ্রামের ষাট বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরম্ন করে দশ-বারো বছরের ছেলে-মেয়েরাও পাটি বুনে। তবে সব পাইত্র্যা চাষিরা এখন আর পাটি বোনে না; অনেকে বিক্রি করে দেয়। পাইত্র্যা অনেকটা এমনি এমনি প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মে। শুধু নিয়ম মাফিক পাইত্র্যা কাটা আর নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করা। একবার একটি পাইত্র্যার মূল বা কন্দ লাগালে তা দীর্ঘদিন ধরে গোড়া থেকে গজাতে থাকে পাইত্র্যা গাছ। এ জন্য যে জমিতে তারা একবার চাষ শুরম্ন করেছে সে জমিতে আর অন্য কোন চাষের কল্পনা করে না। এ গাছ প্রায় ৭-১০ ফুট লম্বা হয়। তাছাড়া তারা শুধু পাইত্র্যা বিক্রি করে ২০০/- থেকে ৪০০/- টাকা পোন (৮০টিতে এক পোন) হিসেবে। ঝালাকঠির তৈরি শীতলপাটি ব্যবসাহিদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম ও বরিশালের বাজারে। রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও ব্যক্তিগতভাবে কলকাতাসহ ইউরোপ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে নিয়মিত যাচ্ছে। মূলত গরমের অত্যাচার থেকে বাঁচতে খাটে বা মেঝেতে শীতলপাটি বিছিয়ে আরাম আয়েশের সাথে সাথে অনেকে নকশা করা শীতলপাটি ঘরে ঝুলিয়াও শোভা বাড়াচ্ছে।
থেকে পাইত্র্যা কেটে প্রথমে ছাঁটা হয়; তারপর প্রতিটি পাইত্র্যা বটি দিয়ে লম্বালম্বিভাবে তিন ফালি কখনো পাঁচ ফালি করে কাটা হয়। ফালিগুলো একটি বড় মাটির পাত্রে (স্থানীয় নাম মটকি) ভাতের ফ্যান (মাড়) দিয়ে কমক্ষত্রে সাত দিন ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে আবার ভাতের ফ্যান মিশ্রিত পানিতে সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ ফালি পানি দিয়ে ধুয়ে বেতি (চিকন ফালি) বানিয়ে শুরম্ন হয় পাটি বোনার কাজ। আর নকশা করার জন্য কিছু বেতিতে বিভিন্ন রং মাখানো হয়। যেমন লাল, সবুজ, নীল প্রভৃতি। বেতির উপরের অংশ দিয়ে তেরি হয় মসৃণ শীতলপাটি। আর মধ্য ভাগ দিয়ে তৈরি হয় মোটাপাটি ও বুকাপাটি। একটি পাটি তৈরি করতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন লাগে। তবে বয়স্ক একজন পাটিবর একাই পাটি বোনার কাজ করলে ৭ দিন সময় লাগে। একটি পরিবার মাসে কমপÿÿ ১০টি পাটি তৈরি করতে পারে। আর এ থেকে পরিবারটির মাসিক আয় সর্বোচ্চ ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা। মোটাপাটি ও বুকাপাটির দাম শীতলপাটির চেয়ে অনেক কম। ৫ ফুট বাই ৭ ফুট মাপের ভালো মানের একটি পাটির দাম বাজারে প্রায় ১,৬০০/- থেকে ২,০০০/- টাকা। মধ্যম মানের পাটির দাম ৬০০/- থেকে শুরম্ন করে ১,০০০/- টাকা। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি। আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ বৎসর যাবৎ বংশ পরস্পরায় এটি চলে আসছে। এক সময় ঝালকাঠি শহর এবং ঝালকাঠি জেলাধীন রাজাপুর উপজেলার বিশেষ কয়েকটি এলাকায় এ শিল্পের প্রসার ঘটে। শুধু ঝালকাঠিতেই এর সুনাম ছিল না। জীবনানন্দের ঐতিহ্যবাহী রম্নপসী বাংলা, অনেক জ্ঞানী-গুণীর জন্মস্থান এই ঝালকাঠির রাজাপুর। তাদের স্বপ্নের ঘর সাজানোর প্রধান আসবাব শীতলপাটি, দিনের ক্লামিত্ম মুছে দেয় একটি সুন্দর পরিপাটি শয়নকÿ, আরামদায়ক শয্যা এনে দেয় সুখ নিন্দ্রা। হারাতে না চাই সুখের নিন্দ্রা, হারাতে না চাই সুখ স্বপ্ন। আজও স্বপ্ন দেখছে এ সব পাটিবররা।
৫.৪ বিক্রির স্থান:
ঝালকাঠি শহরের কাশারি পট্রিতে এক সময় ৮/১০ টি শীতল পাটির দোকান ছিল। এখন মাত্র ০৩টি দোকানে পাটি পাওয়া যায়। পাটি শিল্পীরা এসব দোকানে পাইকারি মূল্যে পাটি বিক্রি করেন। এছাড়া কিছু কিছুলোকজন মাথায় ফেরী করে পাটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্থানীয়ভাবে বিপননের কোন ব্যবস্থা নেই।
৫.৫ সমবায় সমিতি:
হাইলাকাঠিতে ‘‘আশার আলো শীতল পাটি বহুমুখী সমিতির সংগঠন’’ একটি সমিতি দ্বারা এরা পরিচালিত হয়। এই সংগঠনের সভাপতি বলাই চন্দ্র পাটিকর (০১৭৩৫৩৭৪০৯১) এবং সাধারণ সম্পাদক অবিনাস পাটিকর। এদের দ্বারা সমিতিটি পরিচালিত হয়।
৬ জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্য:
ঝালকাঠি জেলার সম্ভাবনাসমূহকে বিকশিত করার মাধ্যমেজেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো ঝালকাঠি জেলা ব্রান্ডিংয়ের মূল উদ্দেশ্যে। জেলা ব্রান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যেসমূহ নিমণরূপঃ
৭ জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় ঝালকাঠি জেলার কৃষি পণ্য পেয়ারা, শীতল পাটি এবং নদীকে সম্পৃক্ত করে জেলা ব্রান্ডিংয়ের বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে।
৮ কৃষি পণ্য পেয়ারা, শীতলপাটি এবং নদীকে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় হিসেবে নির্বাচনের যৌক্তিকতা
ঝালকাঠি জেলার পেয়ারা চাষে সমৃদ্ধ সমগ্র বাংলাদেশে যা বরিশালের পেয়ারা হিসেবে বিখ্যাত, কিন্তু তার উৎপত্তি তৎকালীন বরিশালের ঝালকাঠি মহকুমার বর্তমান ঝালকাঠি জেলাধীন সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের ভীমরম্নলী গ্রামে বসে পেয়ারার ভাসমান বাজার। প্রতিদিন এ ভাসমান বাজার হতে হাজার হাজার মন পেয়ারা বেচা কেনা হয়। প্রতি বছর জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর মাসে পেয়ারা উৎপাদন ও কেনা বেচা হয়।
ঝালকাঠির বহুকালের পুরোনো ঐতিহ্য শীতলপাটি। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি এলে বসতে দেয়া হতো এ শীতলপাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল এ বিশেষ ধরণের পাটি। বর্তমানেও হিন্দুদের বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ শীতলপাটি। গরমকালে শীতলপাটির কদর বেশি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দুপুরে শীতলপাটি দেহ ও মনে শীতলতা আনে। দেশের যে কয়টি জেলায় শীতলপাটি তৈরি হয় তার মধ্যে ঝালকাঠি অন্যতম। এ জেলার রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি, ডহশংকর সাংগর, জগন্নাথপুর গ্রামের প্রায় ৩০০ (তিনশত) টি পরিবার শীতলপাটি তৈরি ও উপকরণ পাইত্র্যা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া রাজাপুর সদর, নলছিটির তিমিরকাঠি, কামদেবপুর প্রভৃতি জায়গায় শীতলপাটি তৈরি হয়।
ঝালকাঠি জেলার সদর, রাজাপুর, কাঠালিয়া, নলছিটি ৪টি উপজেলায় প্রায় ১০টি নদী মিশে আছে। এর মধ্যে সগন্ধা, বিষখালী, কীর্তনখোলা ও ধানসিড়ি নদী অন্যতম। সুগন্ধা হচ্ছে ঝালকাঠি জেলা শহরের নদী। জেলা নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন এলাকায় প্রবাহমান কীর্তনখোলা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায়, আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে নামে ধানসিড়ি নদীর কথা উঠে এসেছে।
৯ লোগো ও ট্যাগলাইন:
ঝালকাঠি জেলার কৃষি পণ্য পেয়ারার ব্যাপক চাষ হয় যা ভাসমান বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয়। এবং বহুকাল ধরে কুটির শিল্প ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি এ জেলাতে উৎপাদিত হচ্ছে। এ বিষয়গুলো লোগোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ট্যাগ= লাইন :
‘‘ পেয়ারা আর শীলতপাটি
এ নিয়ে ঝালকাঠি’’
ট্যাগ লাইনটির মর্মার্থ হলো- পেয়ারা এবং শীতলপাটির মাধ্যমে ঝালকাঠি জেলা সারা বাংলাদেশে ঝালকাঠি পরিচিতি লাভ করবে। এ সকল পণ্য ঝালকাঠিসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখবে।
১০ ঝালকাঠির পেয়ারা, শীতলপাটির বর্তমান অবস্থা :
পেয়ারা গাছে সাধারণত মাঘ ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। পর পর তিন বার ফুল আসে। আষাঢ় মাস হতে পেয়ারা পাকা শুরম্ন হয়। ভাদ্র মাস পর্যমত্ম পেয়ারা পাওয়া যায়। আষাঢ় ও শ্রাবন মাস পেয়ারার ভরা মৌসুম। এ সময় সকল বাগানে পেয়ারা পাকা শুরম্ন হয় তখন চাষীরা নৌকায় করে ভীমরম্নলী, শতদশকাঠী, ডুমুরিয়া, কুড়িয়ানা, আটঘর, মাদ্রা, আতা, আরামকাঠী, ধলহার, প্রভৃতি বাজারে নিয়ে যায় এবং এ সময় এত বেশি পেয়ারা বাজারে আসে যে দাম কমে যায় এমনকি বাজারে পেয়ারা বিক্রয় না হলে ফেলে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। চাষীরা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পেয়ারা বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। চাষীরা হতাশায় ভুগছে, অনেকে পেয়ারা বাগানকেটে নুতন করে আমড়া বাগান সৃজন করছে। জেলায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ার আবাদ হয়। হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার) কেজি। প্রতি কেজি পেয়ার বাজার মূল্য ২০/- (বিশ) টাকা। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ আমড়া ও পেয়ার চাষে সম্পৃক্ত। একটি শীতল পাটি তৈরি করতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন লাগে। তবে বয়স্ক একজন পাটিবর একাই পাটি বোনার কাজ করলে ৭ দিন সময় লাগে। একটি পরিবার মাসে কমপক্ষে ১০টি পাটি তৈরি করতে পারে। আর এ থেকে পরিবারটির মাসিক আয় সর্বোচ্চ ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা। মোটাপাটি ও বুকাপাটির দাম শীতলপাটির চেয়ে অনেক কম। ৫ ফুট বাই ৭ ফুট মাপের ভালো মানের একটি পাটির দাম বাজারে প্রায় ১,৬০০/- থেকে ২,০০০/- টাকা। মধ্যম মানের পাটির দাম ৬০০/- থেকে শুরম্ন করে ১,০০০/- টাকা। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি। আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ বৎসর যাবৎ বংশ পরস্পরায় এটি চলে আসছে।
১২ ব্র্যান্ডিং হিসেবে শীতলপাটির সবলদিক, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি :
সার্বিক পরিকল্পনা ও বাসত্মবায়নের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে নিমেণাক্ত শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি বিশেস্নষণ করা হয়েছে -
সবলদিক |
দুর্বলতা |
জীবনানন্দের ঐতিহ্যবাহী শিল্প কর্ম ঐতিহ্যের বহিঃ প্রকাশ কাচাঁমালের সহজলভ্যতা/ সহজ উৎপাদন নারীর কর্মসংস্থান সুন্দর কুটির শিল্প। পেয়ারার ক্ষেত্রে; ভাল উৎপাদন রোগবালাই কম পুষ্টি গুনে অতুলনীয় |
ন্যায্য মূল্য না পাওয়া মূল উৎপাদনে পাইত্র্যা গাছ চাষের অভাব পৃষ্ঠপোষকের অভাব/ ব্যাংক ঋণ না পাওয়া মূলধন/ পুঁজির অভাব প্রশিÿণের অভাব। আমড়া পেয়ারার ক্ষেত্রে; মৌসুম ব্যতীত উৎপাদন কম হওয়া সংরÿণ করা যায় না ন্যায্য মূল্য না পাওয়া |
সম্ভাবনা |
ঝুঁকি |
ঐতিহ্যের ব্যবহার কর্মসংস্থান সৃষ্টি দেশে বাজার সৃষ্টি প্রক্রিয়াজাতকরণের কুটির শিল্প |
বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের দৌরাত্ব্য ঐতিহ্য ধরে না রাখা। |
পেয়ারা উৎপাদনের সবল দিক, দুর্বল দিক, সম্ভাব্য ঝুঁকি :
সবল দিক :
ঝালকাঠির মাটি দেশীয় উৎকৃষ্টমানের পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত। সবুজ এ ফলটি সুস্বাদু এবং কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ইত্যাদিতে ভরপুর যা এ অঞ্চলে বাংলার আপেল নামে খ্যাত।
দুর্বল দিক :
১। পাকা শুরম্ন করলে কয়েকদিনের মধ্যে পেকে যায়। ২। পরিবহনে সমস্যা। ৩। সংরÿণের সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ এলাকায় নাই। ৪। পোক মাকড়ের আক্রমন বিশেষ করে এথ্রাকনোজ বা তিলে পড়া রোগ হলে পেয়ারার উপরে ফোটা ফোটা দাগ পড়ে বাজারে অন্যান্য পেয়ারার তুলনায় কম দামে বিক্রয় হয়। ৫। বাগান বহু পুরাতন হওয়ায় ফলন কম। ৬। চাষীদের আধুনিক প্রশিÿণ ও ব্যাংক হতে লোনের তেমন কোন সুযোগ নেই।
পেয়ারা চাষে ঝুঁকি :
১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বড় প্রভৃতির কারণে ফলন কম হয়। ২। পুজির সংকট। ৩। লেবার সংকট। ৪। কৃষি যন্ত্রপাতির অভাব। ৫। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরত্য। ৬। বাজার জাত করণের আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিতির অভাব। ৭।পেয়ারা বাজার মূল্য কম- মন প্রতি পেয়ারা মূল্য ২০০/- টাকা হতে ৪০০/- টাকা।
সম্ভাবনা :
১। আধুনিক চাষ ও প্রযুক্তি প্রয়োগে বাজার জাত, সংরক্ষণ করা গেলে চাষীরা প্রকৃত মূল্য পেতে পারে ও বাজারে সারা বৎসর বিভিন্ন ভাবে যেমন জ্যাম জেলী পাওয়া যাবে। ২। পুরাতন বাগান এর স্থলে নুতন বাগান সৃজন করা হলে ফলন বাড়বে। ৩। বারি পেয়ারা বা থাই পেয়ারা পুরাতন বাগান কেটে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। ৪। সংরক্ষণ ও প্রসেসিং সেন্টার করা যেতে পারে।
শীতলপাটির সবলদিক, দুর্বলদিক, সম্ভাবনা, ঝুঁকি :
ঐতিহ্যবাহী শিল্প কর্মঃ ঐতিহ্যবাহী রূপসী বাংলার শিল্প কর্ম, স্বপ্নের ঘর সাজানোর প্রধান আসবাব শীতলপাটি। আনুমানিক আড়াই থেকে তিনশত বৎসর যাবৎ ঝালকাঠি জেলায় শীতলপাটির শিল্প কর্ম চলে আসছে।
কাঁচামালের সহজলভ্যতাঃ ঝালকাঠির অনেক স্থানে শীতলপাটির কাঁচামাল পাইত্র্যা গাছ জন্মে অনেকটা এমনি এমনি প্রাকৃতিক নিয়মে।
শ্রমিকের সহজ প্রাপ্যতাঃ গ্রামের পাটিবররা ব্যসত্ম সময় কাটায় গ্রীস্মকালে গ্রামের ষাট বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরম্ন করে দশ-বারো বছরের ছেলে মেয়েরাও পাটি বুনে।
নারীর কর্মসংস্থানঃ গ্রামের মহিলারা বাড়ির কাজের পাশাপাশি পাটি বুনে স্বাবলম্বী হতে পারে।
দুর্বলতাঃ
ন্যায্য মূল্য না পাওয়াঃ একটি পাটি তৈরি করতে সাধারণত তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। ভাল মানে পাঁচ ফুট বাই- সাত ফুট মাপের একটি পাটির বাজার মূল্য ১,০০০/-থেকে ১,৬০০/-টাকা। কাঁচামালের দাম, মজুরি ধরলে খুব একটা লাভ হয় না।
কাঁচামাল পাইত্র্যা গাছের চাষের অভাবঃ শীতলপাটি তৈরি হয় পাইত্র্যা নামক গাছ হতে যা অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মে এমনিতেই হয়। বিভিন্ন কারণে পাইত্র্যা জন্মানো জমি কমে যাচ্ছে ফলে মূল কাঁচামালের অভাব পরিলÿÿত হচ্ছে।
মূলধনের অভাবঃ মূলধনের অভাবে পাটিবররা সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেনা। স্বল্প লোন বা সাহায্য পেলে আরো ভালভাবে এ ব্যবসাকে চালিয়ে নিতে পারে।
প্রশিক্ষনের বর্তমান আধুনিক যুগে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যথাযথ প্রশিÿণ না থাকায় পাটি তৈরিতে আনুনিকতার ছোয়া লাগছে না। যথাযথ প্রশিÿণ পেলে পাটিবররা সুখ শয্যাকে আরও সুখকর করে বাঁচাতে পারেন বাংলার ঐতিহ্যবাহি পাটি শিল্পকে।
সম্ভাবনাঃ
ঐতিহ্যের ব্যবহারঃ বর্তমান আধুনিক যুগেও মানুষ গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যকে খুঁজে বেড়ায়। স্বপ্নের ঘর সাজানো, প্রাকৃতিকভাবে আরামদায়ক শয্যা হিসেবে মানুষ এখনও ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি ব্যবহার করে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ গ্রামীন এলাকায় শীতলপাটি তৈরী হয়। বৃদ্ধ থেকে শুরম্ন করে দশ-বারো বছরের ছেলে মেয়েরাও পাটি বুনতে পারে। একাজে সবচেয়ে বেশি যুক্ত গ্রামের নারীরা। ফলে গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ আছে।
দেশে বিদেশে বাজার সৃষ্টিঃ ঐতিহ্যবাহী, আরামদায়ক, প্রাকৃতিক শীতলপাটির চাহিদা দেশে বিদেশে রয়েছে। একারণে দেশে বিদেশে বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
ঝুঁকিঃ
বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতাঃ বর্তমানে পস্নাস্টিক জাতীয় পণ্যের সহজ লভ্যতার কারণে মানুষ কম দামে পস্নাস্টিক জাতীয় পাটির ব্যবহার করছে।
মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ব্যঃ অন্যান্য কৃষি পণ্যের মত শীতলপাটি উৎপাদনকারীরাও মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্বে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
ঐতিহ্য ধরে না রাখাঃ বর্তমান আধুনিক যুগে অনেক মানুষ হাতে তৈরী শৈল্পিক সৌন্দর্যের জিনিসপত্র ব্যবহারে অনাগ্রহী বিধায় শীতলপাটির ব্যবহার কমে যাচ্ছে।
১৩ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে ব্র্যান্ডিং এর সম্পৃক্তকরণঃ
অতি প্রাচীনকাল থেকেই ঝালকাঠিতে অত্যমত্ম সুস্বাদু পেয়ারার উৎপাদন বেশী পরিমাণে হয়। চাষীরা দূর-দূরামত্ম থেকে উৎপাদিত পেয়ারা নৌকায় করে সদর উপজেলাস্থ ভীমরম্নলীতে ভাসমান বাজারে বিক্রয় করে থাকে।জীবনানন্দের ঐতিহ্যবাহী রূপসী বাংলায় শীতলপাটি একটি অন্যতম নিদর্শন। গ্রাম বাংলার মানুষের স্বপ্নের ঘর সাজানোর প্রধান আসবাব শীতলপাটি, আরামদায়ক সুন্দর শয়নক শীতলপাটি, যা ঝালকাঠি জেলার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা ব্র্যান্ডিং বাসত্মবায়নের জন্য তিন বছর মেয়াদী নিমেণাক্ত কর্ম-পরিকল্পনা অনুসরণ করা হবে :
স্বল্পমেয়াদ : ০৬ মাস
মধ্যমেয়াদ : ০১ বছর ০৬ মাস
দীর্ঘমেয়াদ : ৩ বছর
কর্ম-পরিকল্পনা ছক
ক্র: নং |
কার্যক্রম |
কর্মসম্পাদন সূচক |
দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি |
সময়সীমা |
সহায়তাকারী |
|
||||
১ |
সংশিস্নষ্ট সকলের অংশ গ্রহণে মত বিনিময় এবং ব্র্যান্ডিং এর বিষয় নিদিষ্টকরণ |
মতবিনিময় অনুষ্ঠিত এবং বিষয় নির্ধারিত |
জেলা কমিটি |
ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত এবং বিষয় নির্ধারিত মার্চ-২০১৭ |
জেলার জনগণ |
|
||||
২ |
একজন জেলা ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ ও বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি গঠন এবং দায়িত্ব বিভাজন |
ফোকাল পয়েন্ট ও বিভিন্ন কমিটি গঠিত |
জেলা কমিটি |
এপ্রিল-২০১৭ |
-------- |
|
||||
৩ |
নাম,লোগো ও ট্যাগ লাইন নির্ধারণ |
চিহ্নিত |
সংশিস্নষ্ট কমিটি |
মে-২০১৭ |
জেলার সকল অংশীদার |
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS