Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped
তারুণ্যের উৎসব ২০২৫

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে পোনাবালিয়া এবং উত্তর পাড়ে ছিল উজিরপুর শিকারপুর। মাঝের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটাই ছিল নদী। মেহেদীপুরের জেলেদের সঙ্গে স্থানীয় লোকদের মনোমালিন্য দেখা দিলে তারা বাসন্ডা ও ধানহাটা খালের উভয় তীরে কাটাবাখারী জঙ্গল কেটে আবাদ করে বসতি স্থাপন করে। ঝালকাঠী বন্দরে পূর্বে অধিকাংশ নাগরিকই ছিল কৈবর্তদাস বা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। বর্তমান ঝালকাঠীর পশ্চিম তীরে জেলেরা জঙ্গল সাফ করে বাসস্থান তৈরী করতঃ জেলে+কাঠি=জাল+কাঠি অপভ্রংশে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয়েছে। তেমনি চাঁদকাঠী,কৃঞ্চকাঠী,চরকাঠী, বিনয়কাঠী ইত্যাদি। যা বিস্তৃত রয়েছে স্বরুপকাঠী পর্যন্ত। বিশ্বরুপ সেনের একখানি তাম্রলিপিতে ঝালকাঠি ও নৈকাঠীর নামোল্লেখ আছে। ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত নীলকরদের দ্বারা ঐসব নামকরণ করা হয়। ঐ সব নীলকর কুঠিয়াল গভর্ণর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে বরিশাল ও ঝালকাঠীতে নীল চাষ শুরু করে। তারা এখানে নীলচাষীদের ভূমি দাস প্রথার বিরুদ্ধে জনৈক নীলকর সাহেবকে আক্রমন করে এবং তার শিরোচ্ছেদ করেন। ঝালকাঠি শহরের সরকারি বিদ্যালয়ের নিকট আজও সেই মৃতের সমাধি দৃষ্ট হয়। ১৭৫৭ সালের পর পর্তুগীজ নাগরিক মি.উড ও ইউয়াট একটি লবন স্টেটের এজেন্ট ছিলেন।১২০৫ সালে রায়েরকাঠীর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মদনমোহনের ছেলে শ্রীনাথ রায় সম্রাটের নিকট থেকে পাট্টা লাভ করেন। মদনমোহন পূর্বে নলছিটি থানাধীন বর্তমানে ঝালকাঠী থানার নথুল্লাবাদ গ্রামে জমিদারির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। মদনমোহন রায়ের পৌত্র রাজা রুদ্রনারায়ন শক্তিমান রাজা ছিলেন। তিনি স্বপ্নযোগে বলেশ্বর নদীর পূর্ব তীরে জঙ্গলে জগদম্বর দশভূজা পাষাণময়ী মূর্তি পেয়ে তা রায়েরকাঠী গ্রামে স্থাপন করেন এবং রায়েরকাঠীতে রাজধানী স্থাপন করেন। রুদ্র নারায়নের প্রপৌত্র জয়নারায়নের সময় আগাবাকের খা নামক এক পাঠান যুবক তার জমিদারির অর্ধেক জোরপূর্বক দখল করলে উভয়ের মধ্যে ঝালকাঠীর পূর্বদিকে সুতালরী এবং পূর্ব দক্ষিনে বারৈকরন গ্রামে এক প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বাকের খা ২২টি কামান ফেলে পলায়ন করেন বলে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। রায়েরকাঠীতে জমিদারি অর্ধেকের মালিক ঘোষাল মহারাজ। ঝালকাঠীতে তাদের কাছারি স্থাপন করেন। ঘোষাল বাহাদুর সরকার হতে রাজা বাহাদুর পদবী প্রাপ্ত হন। তার প্রজারা তাঁকে মহারাজ সম্বোধন করত। এই মহারাজ সম্বোধন থেকেই কাছারিবাড়ী সংলগ্ন এলাকার নাম হয় মহারাজগঞ্জ। ঝালকাঠীর পূর্ব নাম মহারাজগঞ্জ । অর্থাৎ তদ্বীয় পুত্র রাজা সত্যসরন ঘোষাল বাহাদুর বানিজ্য বন্দর ঝালকাঠী প্রতিষ্ঠা ও উন্নতি তারই চেষ্টায়। তার চেষ্টা ও যত্নে রাজপ্রসাদতুল্য অট্টালিকা প্রশস্ত রাজরত্ন ও অসংখ্য জলাশয় নির্মিত হয়েছিল। সে সময় ঝালকাঠী বন্দর তৎকালীন বাংলার একটি শ্রেষ্ঠ ও উন্নত বানিজ্য বন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ঝালকাঠী বন্দর হিসেবে বহুদিন আগ থেকেই পরিচিত। কথায় কথায় আজও লোকে একে দ্বিতীয় কলিকাতা বলে। ভারত বিভক্তির পূর্বে কলিকাতার পরেই এ বন্দরের গুরুত্ব ছিল অত্যধিক। তদানিন্তন ঝালকাঠীর সত্যজ্জল অতীত আছে। অতীতে এখান থেকেই দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো। ১৭৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর মিঃ ম্যাসি কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া সরকারের নিকট পেশকৃত প্রতিবেদনে ঝালকাঠী সম্পর্কে পূর্ণাংগ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। ১৭৯৭ সালে এই অঞ্চল বাখরগঞ্জ জেলায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে ঝালকাঠীকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবং ১৯৮৪ সালের ১ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠী পূর্ণাংগ জেলার মর্যাদা পায়।